পালিয়ে গিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তৎপর ধনঞ্জয় কুমার দাস

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচিত সাবেক কর্মকর্তা ধনঞ্জয় কুমার দাস ওরফে সায়ন্ত পলাতক থেকেও সরব আছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সহযোগী কাপড় ব্যবসায়ী আঁখি ভদ্রকে দিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ধরণের তৎপরতা বহাল রেখেছেন। তার দুর্নীতির বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের পর নিজেকে ধোয়া তুলসি পাতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টায় লিপ্ত এই চক্রটি। লিখিত কোনো প্রতিবাদ না জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্ট-শেয়ারে ঢুকে কমেন্ট করা গণমাধ্যমকর্মীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন এই ধনঞ্জয় কুমার দাস ও তার সহযোগী আঁখি ভদ্র। এরা কাউকে সাংবাদিকতা শেখাচ্ছেন, প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবেদককে নিয়ে অশোভন মন্তব্যও করছেন।

যে সকল গণমাধ্যম ধনঞ্জয় দাসের দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচন করেছে, সে সব গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের লোক মারফত হুমকি ও চলার পথে অনুসরণ করছেন বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন সাংবাদিক। এ ধরণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ গণমাধ্যমকর্মীরা। এ বিষয়ে ২৪ নভেম্বর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডিএমপির শাহবাগ থানায় ধনঞ্জয় দাসের  বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক মেহ্দী আজাদ মাসুম (জিডি-১৭২১, ২৪ নভেম্বর ’২৪)।

অভিযোগে প্রকাশ, পতিত সরকারের অন্যতম দোসর এবং ইসকনের পৃষ্ঠপোষক যুগ্ম সচিব পদের কর্মকর্তা ধনঞ্জয় কুমার দাসই ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। অভ্যুত্থানের পর তিনি আর যাননি সচিবালয়ে তার দপ্তরে। পলাতক থাকা অবস্থায়ই স্বরাষ্ট্র থেকে তাকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের রেশম শিল্প উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। তবে তিনি নতুন পদায়িত কর্মস্থলে গতকাল (২৫ নভেম্বর) পর্যন্ত যোগদান করেননি বলে রাজশাহী রেশম শিল্প উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা গেছে। কোনো ধরনের ছুটি না নিয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন সরকারি চাকরিতে।

ধনঞ্জয় দাসের বিরুদ্ধে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কোনো প্রকার প্রতিবাদ না জানিয়ে ধনঞ্জয় কুমার দাস সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কমেন্ট করছেন, তাদের সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন। কমেন্টের পাল্টা কমেন্ট করছেন। বিশেষ করে গণমাধ্যমে কর্মরত যারা প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের জন্য শুভ কামনা জানাচ্ছেন বা জানিয়েছেন, তাদের নিয়ে এবং প্রতিবেদককে নিয়ে অশোভন ও মানহানিকর মন্তব্য করছেন।

এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্নসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসকে বদলি করা হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রশাসন ১ শাখা থেকে জারি করা উপসচিব মিন্টু চৌধুরির সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ওই আদেশ জারি করা হয়।

অনুসন্ধানে প্রকাশ, গত ৫ আগস্ট থেকেই ঢাকায় গা-ঢাকা দেন ধনঞ্জয় কুমার দাস ও তার স্ত্রী জলি সূত্রধর ওরফে শ্রাবণী জলি এবং ছেলে সৌভিক দাস জয়। গুলশানে সচিবদের জন্য বরাদ্দ বাসায় থাকতেন (শেখ রেহানার বাসার পাশে সরকারি কোয়ার্টার) উপ সচিব ধনঞ্জয় দাস। সেই বাসায় থাকা মালামাল সহযোগী কাপড় ব্যবসায়ী আঁখি ভদ্রের মাধ্যমে সরিয়ে নেয়া হয়। এমনকি ধনঞ্জয়কে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের উপহার দেয়া পাঞ্জাবি তাদের অনলাইন পেজে বিক্রি করতে দেখা গেছে আঁখি ভদ্রকে। ৫ আগষ্টের পর থেকে ধনঞ্জয় দাসকে আর দেখা যায়নি।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লা হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি কলকাতার পার্কে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তাকে দেখা গেছে। আর পতিত সরকারের পর তিনিই সরকারের প্রথম কোনো যুগ্ম সচিব, যিনি অভ্যুত্থানের পর নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে পালিয়ে গেছেন। আর পালিয়ে থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকার বিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here